December 22, 2024, 9:36 pm
খাইরুল ইসলাম মুন্না বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে উপকূলের জলবায়ু বিপন্ন মানুষের অগ্রগতি, সুরক্ষা ও জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে ‘সিডর দিবস’ পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বেতাগী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বিষখালী নদীর পাড়ে প্রেসক্লাবের আয়োজনে শোক র্যালি, নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন ও দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিবস পালন করা হয়।
বেতাগী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টুর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন, স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগি আব্দুস সেবাহান, বেতাগী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম সিদ্দিকী, বেতাগী প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়ন শামীম সিকদার, সহ- সভাপতি সহকারি অধ্যাপক আবুল বাসার খান প্রমূখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোটা উপকূল জুড়ে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসে ছিলো। তাই ঘূর্ণিঝড় ও নিহতদের স্মরণে বছরে অন্তত একটিবার আলোচনা সভার আয়োজন এবং উপকূলের সুরক্ষা, সংকট, সম্ভাবনা, বিকাশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ রাষ্ট্রীীয়ভাবে স্বীকৃতির দাবি জানাই।’
বিষখালী নদীর তীরের উত্তর বেতাগী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান বলেন,‘ঘূর্নিঝড় সিডরের সেই রাতটির কথা মনে পড়লে ঘটনার বহু বছর পর আজও শিউরে উঠে ও কান্না আসে। যতদিন বেচে থাকবেন, ততদিনই তাড়া করে বেড়াবে।’ শুধু আব্দুর রবই নয়, সদর আলী, আব্দুর রব, আজমল হোসেন, মো: ইউনুছ, মো: আল আমিন, আ: জলিল সকলেরই একই অভিব্যাক্তি কিছুতেই যেন ভোলা যায়না সিডরের ঐ সমকার স্মৃতি।
স্থানীয়রা জানায়, বিশেষজ্ঞদের মতে সিডরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সঠিক নিরুপন না করা গেলেও ধ্বংসস্তুপে পরিনত এখানকার শত শত পরিবার সহায় সম্বল হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ে, বিধ্বস্ত হয় কাচাঁ ঘরবাড়ি, গবাদী পশু ও ক্ষেতের ফসল, কৃষি এবং মৎস। রাস্তাঘাট, পুল, ব্রীজ, কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সরকারী হিসেব অনুযায়ী ঘূর্নিঝড়ের কবলে ৩১ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শিশু- ২, মহিলা- ৪ ও পুরুষ ২৫ জন, আহত ১ হাজার। শুধু সরিষামুড়ি ইউনিয়নেই মারা যায় ২২ জন। তছাড়াও বুড়া মজুমদারে ৪ জন, মোকামিয়ায় ২ জন, হোসনাবাদে ২ জন, বেতাগীতে ১ জন। এর মধ্যে কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আদম আলীর স্ত্রী আম্বিয়া বেগম, ছোপখালী গ্রামের শাহ আলমের পুত্র মিরাজ হোসেন, দেলোয়ার হোসেনের পুত্র জহিরুল ইসলাম শিপন, ছোট মোকামিয়ার মোজাফ্ফর সিকদারের স্ত্রী ফতেমা বেগম, মোঃ সেলিমের পুত্র হেলাল, গ্রামার্দ্দন গ্রামের একই পরিবারে হামেদ খানের পুত্র রাকিব, মেয়ে সোনিয়া, স্ত্রী নাজমা বেগম, আবু হাওলাদারের মেয়ে শাহনাজ বেগম, সরিষামুড়ি গ্রামে গফুর হাওলাদারের ছেলে সাইফুল হোসেন, নাজেম আলীর স্ত্রী জমিনা বেগম, গহর হাওলাদারের পুত্র মোঃ সালেক, আ: মন্নানের পুত্র কবির হোসেন কালু,দুলু শরিফের পুত্র মোঃ লিটন ,স্বপন শরীফ, মফেজ উদ্দিন হাওলাদারের পুত্র মো. শাহ্ জালাল, জালাল উদ্দিন ফরাজির পুত্র আ: সোবাহান,আব্বাস সিকদারের পুত্র মো. সুমন, আ: অহেদের মোঃ আলী, শাহজাহানের পুত্র মো: আনিচ, হাসেম খার পুত্র মো. ইব্রাহীম, হারুন মিস্ত্রির পুত্র মো. ফরিদ, শাহজাহানের পুত্র মো. শামসু, গাবতলী গ্রামের মো. হাসেমের পুত্র মো. ইলিয়াছ, আবুল কালামের পুত্র মো. রাসেল, রাজ্জক আলীর পুত্র মো. নুরুল ইসলাম, কালিকাবাড়ী গ্রামের হাসেম মুন্সীর পুত্র মো. কালাম ,এনাম আলীর পুত্র মো. রুস্তম হাওলাদার ,দঃ কালিকাবাড়ীর হোসেন আলীর পুত্র কালু মিয়া ,বেতমোর গ্রামের শাহআলমের পুত্র মো. লাবু ও ভোড়া গ্রামের মোসলেমের পুত্র মো. ফারুক হোসেন ।
সিডরের বছর পেরিয়ে গেলেও আজও ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি এখানের ক্ষতিগ্রস্তদের। তারাা অবহেলিত,বঞ্চিত, অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্বজন হারা ব্যাথা নিয়ে কাটছে অনেকের জীবন, অনেকে এখনো
বিধ্বস্ত ঘড়বাড়ি বানিয়ে দেয়া হবে এ আশায় বুক বেধে আছে। ক্ষতিগ্রস্তরা ভেঙ্গে যাওয়া ঘর মেরামতের জন্য নামে মাত্র যে টাকা পেয়েছে তাতে শুধু মিস্ত্রির খরচও হয়নি। ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও যে সব আবাসন নির্মান হয়েছে তাও অপরিকল্পিত।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসক ফারুক আহমদ বলেন, “সিডরের ভয়াবহ ধ্বংস লীলার ক্ষয়ক্ষতি হয়ত কাটিয়ে ওঠা কখনো সম্ভব নয়, তবে এখানকার জনগোষ্ঠিকে ঘুরে দাঁড়াতে দীর্ঘ মেয়াদী সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে।”